Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও অধিক ফলনের জন্য সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও অধিক ফলনের জন্য সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা
ড. মসউদ ইকবাল১ কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন২

বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ জনগণ গ্রামে বাস করে এবং ৪৭.৫ শতাংশ জনশক্তি     কৃষি কাজের সাথে সরাসরি জড়িত (বিএফএস ২০২০) ধান হলো এ দেশের ১৬.৮২ মিলিয়ন মানুষের প্রধান খাদ্য (অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২১)। এ দেশের কৃষি জলবায়ু সারা বছরই ধান উৎপাদনের জন্য  উপযোগী। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ধান চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ও উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। এ দেশের মোট আবাদি জমির  ৮২ শতাংশ জমিতেই ধানের আবাদ হয়ে থাকে। দেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দেশে প্রতি বছর ২ মিলিয়ন হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ২০৫০ সালে এ দেশের জনসংখ্যা হবে ২৩৮ মিলিয়ন (রাইস ভিশন ২০১৫)। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে এবং এসব ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকন্তু বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ চাষযোগ্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম (রাইস ভিশন ২০১৫)। উচ্চফলনশীল ধানের জাতসমূহের ফলন আশানুরূপ রাখার জন্য বিভিন্ন অজৈব সার যেমন: ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অজৈব সারের পাশাপাশি বিভিন্ন কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে মাটির স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আসছে ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছেÑ লবণাক্ততা রোধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি। মাটি লবণাক্ত ফসল উৎপাদনের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে একটি। বাংলাদেশের লবণাক্তের মাত্রা বেশি দেখা যায় মূলত খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি অঞ্চলে। এগুলো কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১৩এর আওতাভুক্ত। এসব অঞ্চলে ধান চাষের জন্য আমন মৌসুমে বিঘা প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি, ১৪ কেজি এমওপি, ৩ কেজি জিমসাম, ৩৫০ গ্রাম জিংক সালফেট বোরো মৌসুমে ৫২ কেজি ইউরিয়া, ১৬ কেজি টিএসপি, ২০ কেজি এমওপি, ৩৩ কেজি জিপসাম, ১ কেজি জিংক সালফেট সার প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয় (ঋজএ, ২০১৮)। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম।
সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা
মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এককভাবে অজৈব সার অথবা জৈবসার ব্যবহারের পরিবর্তে সুষম মাত্রায় অজৈব সারের সাথে যথোপযুক্ত পরিমাণ জৈবসার ব্যবহার করাকে সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা বুঝায়। সুষম উপায়ে সার ব্যবহার না করার ফলে মাটিতে নতুন নতুন পুষ্টি উপাদানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনায় অজৈব সারের সঙ্গে পচা গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, খামারজাত সার, খড়, সবুজসার (ধৈঞ্চা), বাদামি সার (মুগ ডালের গাছ), বায়োফার্টিলাইজার (অ্যাজোলা) ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এ দেশের কৃষকরা ধানের খড় পশুখাদ্য, বিভিন্ন শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্যের বাহক হিসেবে ব্যবহার করে, এ ছাড়াও গোবর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ানো যায়; মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং মাটিস্থ উপকারী জীবাণুর কর্মক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়;  মাটিতে অজৈব সারের ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে সুষম সারের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণের উপরে শস্যের ফলন অনেকখানি নির্ভর করে। মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকলে মাটি সরস ও উর্বর হয়। ইহা মাটির গঠন, পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও গাছের খাদ্য উপাদান চুয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।
ধান উৎপাদনে সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা
মাটিতে গাছের খাদ্যোপাদান কম-বেশি মজুদ থাকে। কোন জমিতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যোপাদান জমা থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর সার প্রয়োগ না করে ফসল উৎপাদনের ফলে সে জমিতে একসময় ফলন লক্ষণীয়ভাবে কমতে থাকে। মাটি পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী রাসায়নিক সার জমিতে প্রয়োগ করে ধানের ফলন বাড়ানো যেতে পারে। তবে ৫০ ভাগ অজৈব সারের সাথে যদি ২টন/হে: গোবর সার এবং ১ টন/হে: ছাই প্রয়োগ করা যায় সে ক্ষেত্রে ধানের ফলন বৃদ্ধির সাথে সাথে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ১২ বছর দীর্ঘ একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে বছরে দুটি অথবা তিনটি ফসল আবাদে ৫০ ভাগ অজৈব সারের সাথে  ২টন/হে: গোবর সার এবং ১ টন/হে: ছাই প্রয়োগ করা আর এককভাবে মাটি পরীক্ষাভিত্তিক ১০০ ভাগ অজৈব সার প্রয়োগ করা প্লট সমান পরিমাণ ফলন পাওয়া গেছে। অধিকন্তু যে প্লটে অজৈব সারের সাথে জৈবসার প্রয়োগ করা হয়েছিল তার মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। সারণী-১ এ ফলাফল দ্রষ্টব্য।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণত গোবর, খড় ও সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চা ব্যবহৃত হয়। হেক্টরপ্রতি ৫টন শুকনো খড়, গোবর বা ৪৫ দিনের ধৈঞ্চা গাছ আমন মৌসুমে প্রয়োগ করা হলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের চেয়ে ধানের ফলন বেশি পাওয়া যায়। আমন মৌসুমে হেক্টরপ্রতি একবার ৫ টন ধৈঞ্চা ও ৬০ কেজি  নাইট্রোজেন সার এবং বোরো মৌসুমে মাত্র ৮০ কেজি নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে আমন ও বোরো মৌসুমে মিলে মোট ১১ টন ধান উৎপাদন সম্ভব।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে, যদি ২ টন মুরগির বিষ্ঠা মাটিতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ধান চাষে প্রচলিত নিয়মমাফিক যে সার ব্যবহার করা হয় তার শতকরা ৫০ ভাগ নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম এবং পুরো মাত্রায় ফসফরাস ও সালফারের চাহিদা পূরণ হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, বোরো মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ২ টন বিষ্ঠা দিলে ৮০ কেজি নাইট্রোজেন (১৭৬ কেজি ইউরিয়া) সারের সমান কাজ করে (চিত্র দ্রষ্টব্য)। আবার ২ টন মুরগির বিষ্ঠার সাথে ৮৮ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়। আমন মৌসুমের পূর্বে মুরগির বিষ্ঠা দেওয়া জমিতে শুধু ৮৮ কেজি ইউরিয়া সার দিয়েও সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া গেছে।
পরিশেষে বলা যায় সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা শুধু জমির উর্বরতা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করে না, সাথে সাথে ধানের ফলন বৃদ্ধি করে থাকে। এ দেশের কৃষি জমিতে বিশেষ করে ধানী জমিতে প্রতি বছর রাসায়নিক সারের সাথে অন্তত একবার করে সহজলভ্য জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা উচিত। বাংলাদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে জৈবসার উৎপাদনে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করতে পারে। সবশেষে বলা যায় মাটির উর্বরতা রক্ষা করে টেকসই ফলন পাওয়ার জন্য সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখক : ১সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, ২ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। মোবাইল : ০১৮২৮৩০৮৫৩০, ই-মেইল : ংসসড়সরহ৮০@মসধরষ.পড়স

আপডেট চলমান


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon